নিজস্ব প্রতিবেদক
ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে সরকারকে উৎখাত। এরপর দেশের মানুষকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে স্বপ্ন দেখিয়ে আখের গোছানো। এরমধ্যে নিজের প্রতিশোধ পরায়ণতার জন্য আওয়ামী লীগের মতো দলকে নিষিদ্ধ করা। গত ১০ মাসে ক্ষমতায় আসার পর জাতি এসবই দেখেছে নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে। তার এই ১০ মাসের শাসনামলের ফিরিস্তি ও বাংলাদেশের দুর্গতির শঙ্কা নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট।
সংস্কারের পথে বাধা প্রতিশোধ প্রবণতা নামের ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে, যা দেশে রাজনৈতিক প্রতিশোধের সংস্কৃতি গভীর করছে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপের দিকে, বিশেষত ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনার কারণে। যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানি পণ্যে ৩৭% পাল্টা শুল্ক বসাতে যাচ্ছে, যা ৯ জুলাই থেকে কার্যকর হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, সংস্কার কার্যক্রম সঠিক পথে আছে এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দলগুলো উঠে এলেও জরিপে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামি এগিয়ে, এনসিপির মতো দলগুলো পিছিয়ে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলেও এখনো দলটির উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, অন্তর্বর্তী সরকার আগের মতোই বিরোধীদের দমন করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিশোধ নয়, বাংলাদেশের দরকার একটি ঐক্যের মুহূর্ত—একটি ‘নেলসন ম্যান্ডেলা মুহূর্ত’।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কোনো দল নিষিদ্ধ করা সমাধান নয় শিরোনামে ইকোনমিস্টের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকার আইন সংশোধন করে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করে। এই পদক্ষেপকে প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রতিহিংসাপরায়ণ বলে সমালোচনা করেছে ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট। তাদের মতে, বাংলাদেশ-এর উচিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে দলটিকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন শেষে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তাকে সরিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, যার নেতৃত্বে আছেন মুহাম্মদ ইউনূস। সরকার নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলেও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ক্ষমতায় থাকাকালীন বিশেষ সুবিধা নেয়ায় নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ২০২৪ সালের ৮ই অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন। এরপর তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দ্রুত সরকারি অনুমোদন ও বিশেষ সুবিধা পায়। সেই সাথে আছে, গ্রামীণ ব্যাংকের কর মওকুফ ও সরকারিভাবে ব্যাংকে শেয়ারের পরিমাণ ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে থাকা শ্রম আইন লঙ্ঘন ও অর্থপাচারের মামলা দ্রুত খারিজ হয়ে যাওয়ায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রগত ১০ মাসে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যা ঘটেছে, তা নিছক ক্ষমতা বদলের কোনো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নয়—এটা ছিল পরিকল্পিত একটি ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে বিতাড়িত করে, দেশের সবচেয়ে পুরনো ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে, ড. ইউনূস নিজেকে ন্যায়পরায়ণ তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাস্তবে যা দেখা গেছে, তা হলো—একদিকে প্রতিশোধ, অন্যদিকে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নিজের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে পুঁজি করে দেশীয় রাজনীতিকে নিজের মতো করে রূপ দিতে চাওয়া। জাতিকে আশ্বাস দিয়ে একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন দেখানো হলেও, বাস্তবে জনগণ পাচ্ছে অনিশ্চয়তা, বৈদেশিক চাপে জর্জরিত অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক বিভাজন।"
বিশ্লেষকেরা আরও বলছেন, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা শুধুমাত্র একটি দলের বিরুদ্ধে নয়, এটা ছিল দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর সরাসরি আঘাত। অতীতে যেমন ক্ষমতাসীনরা বিরোধীদের দমন করেছে, এবার বিরোধীতার ছদ্মবেশে সেই একই কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে, শুধু নতুন মুখে।”